Skip to main content

আমার বৈশাখ আমার গর্ব


র এক দিন পেরোলেই চৈত্রসংক্রান্তি।  তার পরদিন পয়লা বৈশাখ—নতুন বছরের প্রথম দিন।  দেশজুড়ে সবখানেই চলছে নববর্ষ বরণের প্রস্তুতি।  শিক্ষার্থীদের মনে সাজ সাজ রব।  গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে কথা হয় কজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে।


বৈশাখী উৎসব নিয়ে এক একে বেরিয়ে আসতে থাকে প্রত্যেকের পরিকল্পনার কথা।  ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সারজিনা ত্রিমা বলেন, ‘চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে নতুন বছরের সূর্যোদয়ের পর থেকেই ঢাকার সব পথ যেন মিশে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহনায়। আমি যেহেতু আলোকচিত্রী, তাই সারা দিন ছবি তুলেই সময় কাটবে।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের জাবের হায়দার বলেন, ‘ভোরবেলাতে থাকব রমনা বটমূলের অনুষ্ঠানে। এরপর ভাবছি পান্তা-ইলিশ মুখে পুরেই বেরিয়ে পড়ব ঢাকার বাইরে আশপাশে কোথাও।’


আইন বিভাগের তাসনিন সারা বলেন, ‘আমাদের আইন বিভাগ থেকে প্রতিবছরই বৈশাখী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে থাকছি। এরপর লালবাগ কেল্লায় যাব বন্ধুরা মিলে।’ সাদিয়া আনজুম আশারাফী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসি থেকে পাস করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক হেলথ বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে আমার কিছু বিদেশি সহপাঠী আছে। তাদের আমি আমার বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাদের বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। ওদের খাওয়াতে চাই মুড়ি-মড়কি আর পান্তা-ইলিশ।’

আমরা আরও একটু এগিয়ে যাই। টিএসসিতে আরও একটা দলের সঙ্গে কথা বলি। তারা বৈশাখ নিয়ে অনেকটা ‘মৃদু তর্কে’ মেতেছে। মূল বিষয়: আমরা কি এক দিনের বাঙালি? এ নিয়েই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছিলেন জান্নাতুল কেয়া, অমিত ঘোষ, লাবণ্য সরকার, মুনতাসির হাসান ও অনুপম ইসলাম। লাবণ্য বলছিলেন, এবার পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আমি দুটি পোশাক কিনেছি। দুটি শাড়ি।  এর পরই ফোড়ন কাটেন কেয়া, ‘আমি বাপু এক দিনের জন্য বাঙালি সাজি না।  আমি বছরের প্রতিটি দিনই বাঙালি।’ কেয়াকে থামিয়ে কথা শুরু করেন অনুপম, ‘আমিও পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে পোশাক কিনেছি। পোশাকগুলোয় পাশ্চাত্য আর আর বাঙালি ঐতিহ্যের মিশেল আছে।’ এতক্ষণ চুপ করে শুনছিলেন অমিত। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘এটাই হচ্ছে মূল ব্যাপার। আমরা সময়ের সঙ্গে আধুনিক হব; কিন্তু মনের মধ্যে ঠিকই বাঙালিয়ানা রয়ে যাবে।’ ব্যাপারটা কেমন? প্রশ্ন করে নিজেই উত্তর দিতে শুরু করেন অমিত, ‘আমরা থার্টি ফাস্ট নাইট পালন করি, ভ্যালেনটাইনস ডে পালন করি, অন্য দেশের আরও নানা সংস্কৃতি এক-আধটু উদ্যাপন করি। তবে বাংলা নববর্ষ, পৌষ মেলা, নবান্ন উৎসব পালনের মজাই আলাদা। আমি মনে করি, সবকিছুর ওপরে নিজের সংস্কৃতি।’ 

অমিতকে সমর্থন দিয়ে কথা শুরু করেন মুনতাসির, ‘বিশ্বায়নের এই সময়ে সংস্কৃতির আগ্রাসনকে আমরা ঠেকাতে পারব না। তার মানে এই নয় যে নিজের সংস্কৃতিকে ভুলে যাব।  অন্য সংস্কৃতির যা কিছু ভালো, তা আমরা গ্রহণ করব। আর যা কিছু খারাপ, তা বর্জন করব।’ ‘ঠিক বলেছিস, ঠিক বলেছিস!’ গলায় উচ্ছ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করেন লাবণ্য, ‘বাঙালির ঐতিহ্য চিরন্তন ও শাশ্বত। বাঙালি ঐতিহ্য কখনো হারিয়ে যাবে না।’

অমিত বলেন, ‘ব্যাপারটা ভেবে দ্যাখ, আগে গ্রামে-গঞ্জে বৈশাখী মেলা হতো। এখন কিন্তু শহরেও হয়। শহরের ছেলেমেয়েরাও বৈশাখ উদ্যাপন করে। তার মানে এই ঐতিহ্য চির বহমান।’ ‘হ্যাঁ, আমরা আগেও পয়লা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খেতাম, এখনো খাই।  আগেও আলপনা আঁকতাম, মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতাম, মেলায় গিয়ে বাঁশি কিনতাম। এখনো এসব করি।  সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎসবের ধরন বদলেছে, কিন্তু মূল সুর কিন্তু একই আছে।’ বলছিলেন অনুপম।এভাবেই বৈশাখ থাকে আমাদের তরুণদের মনে। এভাবেই বৈশাখী ঐতিহ্য বয়ে চলে আমাদের তরুণদের জীবনাচরণে।

Popular posts from this blog

মাটির পণ্যের খোঁজে

বাংলা নববর্ষের আগে আগে বাঙালিয়ানা আমেজের ছোঁয়া এখন সব জায়গায়। সব জায়গাতেই চোখে পড়ছে বৈশাখের নানা সামগ্রী। পয়লা বৈশাখের দিনটিতে নিজের বাড়ি সাজিয়ে তুলতে পারেন দেশি উপকরণের ছোঁয়ায়। নানা রকম মাটির সরা, শখের হাঁড়ি, বিভিন্ন আকারের মাটির কলসি, ছোট খেলনা, ফুলদানি, সানকি ইত্যাদি এখন প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যাচ্ছে। মাটির এসব জিনিসপত্রে নকশা আঁকা হয় বর্ণিল রঙে। কোনো হাঁড়িতে ফুল-কল্কে আঁকা, কোনো সরায় মাছ, হাতির ছবি আঁকা—এমন পণ্য ঘরটাকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারে। পয়লা বৈশাখে খাবার পরিবেশন করা যেতে পারে মাটির থালা-বাটিতে। আবার ঘরের কোণে ঠাঁই পেতে পারে মাটির রঙিন কলসি, ফুলদানি ইত্যাদি। এ ছাড়া মাটির গয়না পাওয়া যাচ্ছে এখন। যেখানে পাবেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের উল্টো দিকে রয়েছে মাটির নানা পণ্যের দোকান। সারা বছর এ দোকানগুলোতে কেনাকাটা চললেও বৈশাখের আগে আগে কেনাবেচা বেশি হয়ে থাকে। দোকানগুলোতে মাটির সানকি পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। ২৫০ টাকার মধ্যে মাটির পাতিল পাওয়া যাবে। নকশা আঁকা পাতিলের দাম ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত গড়াতে পারে। কলসির দাম পড়বে ১৫০ থেকে ৩৫০ ...

বসন্ত উৎসব-২০১৭

বসন্তের সমীরণে ফাল্গুনের প্রথম দিনে পুরো ঢাকা শহর সাজে ফাগুন সাজে। হলুদ, কমলা ও বাসন্তী রঙ্গের ছোঁয়া সবার মধ্যে।  যে যার মতো করে এই দিনে ঘুরতে বের হন। কারও সঙ্গে পরিবার বা বন্ধুবান্ধব।  নগরজুড়েও থাকে নানা আয়োজন। প্রতি বছরের মতো এ বছরও বসন্তেকে বরণ করা হবে নানা আয়োজনে। বসন্ত উৎসব জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদ দুই দশক ধরে পয়লা ফাল্গুনে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে আসছে।  বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ফুল ও ছবির প্রদর্শনী, পোশাক, সাজসজ্জা ও দেশজ সংস্কৃতির পরিবেশনার মাধ্যমে বসন্তকে স্বাগত জানানো হয়। ভোরের আলো ফুটতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মূখরিত হতে লাগল হাজার প্রাণের স্পন্দনে।  সূর্যি মামার দেখা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দলে দলে মানুষজন জড়ো হতে লাগল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকল অনুষদের বকুলতলায়। সবাই যে একসঙ্গে বসন্তকে বরণ করবে। বাসন্তী রঙ্গের শাড়িতে মেয়েরা আর ছেলেরা পাঞ্জাবিতে।  দেখলেই মন ভালো যায় এমন দৃশ্য। 

স্বচ্ছ জলে সবুজ বনে

ভরা বর্ষায় কোথায় যাওয়া যায়—শুনেই সিলেটের বন্ধু, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেরে আলম আমন্ত্রণ জানালেন সিলেটে যাওয়ার। জানালেন আবহাওয়াও চমৎকার। ২৮ জুলাই রাতে সিলেটের বাসে উঠলাম স্ত্রী আইরিন আসাদকে নিয়ে। সকালে গিয়ে পৌঁছালাম। থাকার ঠিকানা সিলেট সার্কিট হাউসে। জানালা দিয়ে সুরমা নদীতে চোখ রাখতেই দেখি ঝিরঝিরি বৃষ্টি। মনটা কিছুটা দমে গেলেও আশা ছাড়লাম না। কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি থেমে গেলে মেঘলা আকাশ সঙ্গে নিয়েই যাত্রা শুরু করলাম বিছনাকান্দি আর পাংতুমাই ঝরনার দিকে। সঙ্গী হলেন আরাফাত হোসেন। সিলেট শহর থেকে অটোরিকশায় বিছনাকান্দি যাওয়ার রাস্তাটা এতটাই খারাপ যে কিছুক্ষণ পরপর বিরক্তি লাগছিল। দেড় ঘণ্টার পথ পেরোনোর পরে ট্রলার ভাড়া করার সময় দেখলাম, মাথার ওপর সূর্য! আকাশও বেশ ঝকঝকে। পিয়াইন এলাকা থেকে নৌকা যাত্রা শুরু করল পাংতুমাই ঝরনার দিকে। ভরা বর্ষায় চারদিকে থইথই পানি। পাংতুমাই যাওয়ার পথে পথে রাখাল আর গরু-মহিষের পাল দেখা যায়। কোথাও কোথাও রাজহাঁসের পালও। ক্রমেই পাহাড়ের দিকে এগোতে থাকল নৌকা। দূর থেকে দেখতে কালো পাহাড় আস্তে আস্তে সবুজ হতে থাকল। ঘণ্টা খানেকের পথ শেষে দূর থেকে দেখা যেতে থাকল প...

মিষ্টি কুমড়োর যত উপকারিতা

সুগারের পেশেন্ট? এই খেতে ভয়, ওই খাবারে বারণ? চোখ বুজে মিষ্টি কুমড়ো খান। হার্টের রোগ থেকে ডায়াবেটিস, মিষ্টি কুমড়ো কাজ করে ম্যাজিকের মতো। হজমের শক্তি বাড়ায়। ত্বক রাখে টানটান। কমিয়ে দেয় বয়স। মিষ্টি কুমড়োয় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন A, ভিটামিন C, ভিটামিন E, বি-কমপ্লেক্স। বিটাক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, জিঙ্ক, আলফা হাইড্রক্সাইড, আয়রন, ফ্লেভনয়েড, লিউটিন সমৃদ্ধ মিষ্টি কুমড়ো।  ১. ভিটামিন A, বিটাক্যারোটিন চোখের জন্য খুব ভাল।  রেটিনার বিভিন্ন অসুখ প্রতিরোধ করে মিষ্টি কুমড়ো। ২. বিটাক্যারোটিন শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডন্ট। শরীরের ফ্রি রেডিক্যাল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে।  বিভিন্ন দূষণ, স্ট্রেস ও খাবারে যেসব কেমিক্যাল ও ক্ষতিকর উপাদান থাকে, সেগুলোর কারণে ফ্রি রেডিক্যাল ড্যামেজ হতে শুরু করে। শরীরের কোষ নষ্ট হতে শুরু করে। খারাপ কোষের সংখ্যা বাড়তে থাকে।  এসব প্রতিরোধ করে মিষ্টি কুমড়ো। ৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করে। কোলেস্টেরল কমায়। ধমনীর দেওয়ালে চর্বির স্তর জমতে বাধা দেয়।  ফলে, মিষ্টি কুমড়ো নিয়মিত খেলে হার্টের রোগ প্রতিরোধ করে। ৪. মিষ্...

বেল নাকি তরমুজ? কোনটি খাবেন?

এ সময় তেষ্টা পেলেই পান করছেন বেল না তরমুজের রস।  দুটো ফলই সুস্বাদু।  দেখে নিন কোনটার কী গুণাগুণ। বেল উপকারিতা  ঃ * বেলের শরবত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। * ক্লান্তি দূর করে। * পাইলস রোগের জন্য বেল অনেক উপকারী। * বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ করে। * নিয়মিত বেল খেলে কোলন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। * বেলে রয়েছে ভিটামিন এ, যা চোখের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক অঙ্গগুলোর পুষ্টি জোগায়। * বেল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। * বেলের শাঁস পিচ্ছিল ধরনের, যা পাকস্থলীর জন্য উপকার। * বেল থেকে পাওয়া বেটা ক্যারোটিন রঞ্জক মানবদেহের টিউমার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে। অপকারিতা  ঃ  যাদের থাইরয়েড রয়েছে, তাদের বেল খাওয়া উচিত নয়, এতে ক্ষতি হয়। চিকিৎসকেরা অন্তঃস্বত্বাদেরও অনেক সময় বেল খেতে নিষেধ করেন। খাদ্য উপাদান পানি ৫৪.৯৬-৬১.৫ গ্রাম আমিষ ১.৮-২.৬২ গ্রাম ক্যারোটিন ৫৫ মিলিগ্রাম থায়ামিন ০.১৩ মিলিগ্রাম রিবোফ্লেবিন ১.১৯ মিলিগ্রাম নিয়াসিন ১.১ মিলিগ্রাম টারটারিক অ্যাসিড ২.১১ মিলিগ্রাম ফসফরাস ৫০ ...