ঠক ঠক ঠক। রঙিন বৈশাখ কড়া নাড়ছে দরজায়। বৈশাখ প্রতিবছরই ঘরের দুয়ার খুলে চলে আসে আপনার অন্দরে। বাঙালির এই উৎসবকে প্রতিটি ঘরে আমন্ত্রণ জানানো হয়, রঙের খেলায় মেতে উঠতে। বৈশাখী রং ফুটে ওঠে কারও পোশাকে, কারও দেয়ালে, কারও দরজায়, কখনো চাদরে কিংবা পর্দায়। রঙের এই খেলা আরও উজ্জ্বল হয়, যখন নকশাটা হয় লোকজ ধাঁচে।
নতুন বাংলা বছরে অনেকেই চান নিজের পোশাক এবং ঘর যেন পরিপাটি হয়, যেন সবকিছুতে থাকা
চাই বাঙালিয়ানা আর উৎসবের ছোঁয়া। ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হক ঢাকার মিরপুর ডিওএইচএসে
তাঁর নিজের বাড়ির অন্দরে রেখেছেন লোকজ নকশার ছোঁয়া। তিনি জানালেন, হাতপাখা, ঢোল, মাছ,
পাখি, ফুল—মোটকথা বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যা যা জড়িত, তার সব দিয়েই আঁকা
যায় লোকজ নকশা। রং-তুলি দিয়ে হাতে আঁকলে বা হ্যান্ড পেইন্টিং করলে সেই নকশা হয় আরও
আকর্ষণীয়।
এমদাদ হক বললেন, ‘কাপড়, দেয়াল, আসবাবপত্র, যেকোনো কিছুতেই হাতে আঁকা যায়। তবে কাঠের
ওপর বার্নিশ রং ব্যবহার করা ভালো। কাপড়ে ফেব্রিক বা ব্লকপ্রিন্টের রং ব্যবহার করা যায়।’
ফেব্রিক রং টেকসই বেশি বলে জানালেন তিনি। দেয়ালে তো দেয়ালের রংই ব্যবহার করা যাবে।
ধাতব বস্তুর (যেমন টিন) ওপরেও রং করা যাবে।
লোকজ ধাঁচের নকশায় হাতে আঁকা বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যাবে রাজধানীর ফ্যাশন হাউস ‘যাত্রা’য়।
পোশাক, শো-পিস, ল্যাম্প, ট্রে, বাক্স, আসবাব, আয়না, পর্দা, চাদর, এমনকি কাপড়ের গয়নাতেও
লোকজ নকশার হাতে ছবি আঁকা যায় বলে জানালেন যাত্রার সামাজিক যোগাযোগ ও বিপণন ব্যবস্থাপক
তাবাসসুমা। তিনি জানান, যাত্রার প্রায় সব পণ্যতেই লোকজ ধাঁচে হ্যান্ড পেইন্টিং করা
হয়। ফরমাশ করলে যাত্রার ডিজাইনাররা যেকোনো কিছুতেই লোকজ নকশায় ছবি এঁকে দেবেন।
তবে চারুকলার শিক্ষার্থীরাও এসব কাজের ফরমাশ নিয়ে থাকেন বলে জানান এমদাদ হক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
চারুকলা অনুষদের কারুশিল্প বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী হোসনে আরা জানালেন, মূলত
কারুশিল্প বিভাগের শিক্ষার্থীরাই এসব কাজের ফরমাশ নিয়ে থাকেন। যেকোনো কিছুতে তাঁরাও
লোকজ নকশার হ্যান্ড পেইন্টিং করতে আগ্রহী। তবে নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত ও দোয়েল চত্বরের
কিছু দোকানেও এমন ফরমাশ নেওয়া হয়।
নকশিকাঁথা থেকে সেলাই বা স্টিচ, প্যাঁচা, হাতির ছবির মাধ্যমে সাদা দেয়ালকে রঙিন করে
তোলেন চিত্রশিল্পী দীপা দাস।
তিনি জানান, ইচ্ছে করলেই আমরা আসবাব বা কাঠের জিনিসের ওপর আমাদের লোকজ নকশা ফুটিয়ে
তুলতে পারি।